জেনফোন ম্যাক্স প্রো এম১ : স্বল্প মূল্যে দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ
আসুসের ফোনগুলো বিগত বছরগুলোতে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। ডিজাইন, ইন্টারফেইস, আপডেটে অনীহা আর দামের কারণে অন্যান্য ব্র্যান্ড থেকে ফোনগুলো বরাবরই পিছিয়ে ছিল।
ল্যাপটপ থেকে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারকের কাতারে নাম লেখানো তাইওয়ানের কোম্পানির জেনফোন সিরিজের নতুন মডেলের এ ফোন ম্যাক্স প্রো এম১।
দেখা যাক বিশাল নাম,
ডিসপ্লে ও ব্যাটারি সমৃদ্ধ ফোনটি আসলে কতটা আকর্ষণীয়। রিভিউতে সবচাইতে কম মূল্যের
মডেল, অর্থাৎ ৩ গিগাবাইট র্যাম, ৩২ গিগাবাইট স্টোরেজ, পেছনে ১৩ মেগাপিক্সেল ও
সেলফিতে ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা মডেলটি তুলে ধরা হয়েছে।
এক
নজরে
·
ডুয়াল সিম, ফোরজি
·
৫ দশমিক ৯৯ ইঞ্চি, ২১৬০
x ১০৮০ পিক্সেল রেজুলেশনের আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে, অনুপাত ১৮:৯
·
অ্যান্ড্রয়েড ৮ দশমিক ১
ওরিও অপারেটিং সিস্টেম, কোনও বাড়তি ইন্টারফেইস নেই
·
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন
৬৩৬, অক্টাকোর প্রসেসর। গতি ১ দশমিক ৮ গিগাহার্জ
·
অ্যাড্রিনো ৫০৯ জিপিউ
·
৩, ৪ অথবা ৬ গিগাবাইট
এলপিডিডিআর৪এক্স র্যাম
·
৩২ অথবা ৬৪ গিগাবাইট
স্টোরেজ
·
আলাদা মাইক্রো এসডি
কার্ড স্লট
·
ডুয়াল ব্যাক ক্যামেরা।
মূলটি ১৩ বা ১৬ মেগাপিক্সেল, অ্যাপার্চার এফ/২.২। অন্যটি ৫ মেগাপিক্সেল,
অ্যাপার্চার এফ/২.৪
·
ফোরকে ২১৬০পি রেজুলেশনে
৩০ এফপিএস ভিডিও ধারণক্ষমতা
·
৮ অথবা ১৬ মেগাপিক্সেল
সেলফি ক্যামেরা, এফ/২.২ অ্যাপার্চার
·
ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ৪.২,
জিপিএস
·
এফএম রেডিও
·
মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট,
হেডফোন জ্যাক
·
পেছনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট
সেন্সর
·
৫০০০ এমএএইচ
ধারণক্ষমতার ব্যাটারি
·
কালো অথবা ধূসর রঙ
ডিজাইন
সামনে লম্বাটে নচহীন
ডিসপ্লে, ওপরে নিচে বেশ চিকন বেজেল, পুরো বডি প্লাস্টিকে তৈরি ফোনটির ওজন নেহাত কম
নয়। মূলত বড় ব্যাটারির কারণেই ফোনটি খুব হালকা হতে পারেনি।
পেছনের অংশ তৈরিতে
ব্যবহার করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর দেয়া হয়েছে পেছনের মাঝ
অংশে। ক্যামরা রয়েছে পেছনের উপরের বাম কোনায়, ডুয়াল ক্যামেরা বসানো হয়েছে এখনকার
চল অনুযায়ী ওপর-নীচ করে।
ফোনের ডান পাশেই আছে
পাওয়ার আর ভলিউম বাটন। বাম পাশে আছে সিম ও মেমরি কার্ড স্লট, দুটি সিম ও মেমরি
কার্ড একসঙ্গেই ব্যবহার করা যাবে। স্পিকার, মাইক্রোইউএসবি ও হেডফোন জ্যাক সব দেয়া
হয়েছে ফোনের নিচে।
ডিজাইনের দিক থেকে
ফোনটির বাজারের বেশিরভাগ ফোনের সঙ্গে তেমন তফাত নেই। অবশ্য মূল্য অনুযায়ী অসাধারণ
ডিজাইন আশা করাও ভুল। তবে তৈরির মান নিয়ে সন্দেহ করার মত কিছু পাওয়া যায়নি।
ডিসপ্লে
আইপিএস এলসিডি
প্রযুক্তির ডিসপ্লেটি অনেকটা অ্যামোলেডের মত গভীর স্যাচুরেশনের কালার দেখাতে
সক্ষম। পিক্সেল ঘনত্ব যথেষ্ট, এমনকি ভিআর কনটেন্ট দেখার সময়ও মনে হবে না পিক্সেল
আলাদা করে দেখা যাচ্ছে। তবে কালার স্যাচুরেশন সামান্য কমানোর ব্যবস্থা থাকলে খারাপ
হত না। ব্রাইটনেস যথেষ্ট, সরাসরি রোদেও ব্যবহার করা যাবে।
কালার ব্যালেন্স বা কন্ট্রাস্ট নির্ভুল নয়, এটি ছাড়া অন্য সমস্যা নেই। বেশিরভাগ ব্যবহারকারীদের কাছে এটা সমস্যাই মনে হবে না।
পারফরমেন্স
কোয়ালকম এবার তাদের
বাজেট প্রসেসরেও যুক্ত করেছে ক্রাইয়ো প্রযুক্তির কোর। ফলে প্রসেসিং পারফরমেন্সে
জেনফোন ম্যাক্স প্রো এম১ এগিয়ে আছে। মাল্টিকোর প্রসেসিং পারফরমেন্স প্রায়
স্ন্যাপড্রাগন ৮২০ এর সমান, যদিও ফোনের ৬৩৬ প্রসেসর সিঙ্গেলকোরে পিছিয়ে আছে।
গিকবেঞ্চ অনুয়ায়ী
সিঙ্গেল কোর পারফরমেন্স ১৩০০ পয়েন্ট এবং মাল্টিকোর পারফরমেন্স ৪৯০০ পয়েন্ট।
অ্যাড্রিনো ৫০৯ জিপিউটি
ডিসপ্লের রেজুলেশনের সঙ্গে মানিয়ে গেছে। বেশিরভাগ গেইম খেলা যাবে ল্যাগ ছাড়াই। তবে
হাই গ্রাফিক্সের গেইমগুলো লো সেটিংসে খেলতে হতে পারে, যেমন পিইউবিজি।
মাল্টিটাস্কিং করার জন্য ৩ গিগাবাইট র্যাম এখনও কাজ চালানোর মত, তবে দ্রুতই তা কম মনে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। র্যামের গতি নিয়ে অবশ্য চিন্তা নেই, তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে এলপিডিডিআর৪এক্স প্রযুক্তি।
স্টোরেজের গতি আহামরি
নয়। এই একটি দিক থেকে অল্প পিছিয়ে আছে আসুসের ফোনটি।
আনটুটু বেঞ্চমার্কে
জেনফোন ম্যাক্স প্রো এম১ পেয়েছে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার পয়েন্ট, যার অর্থ ফোনটি
আজকের মানদণ্ড অনুয়ায়ী মাঝারি পারফরমেন্স দেখাতে সক্ষম।
ক্যামেরা
রিভিউতে স্বল্পমূল্যের
মডেলটি তুলে ধরা হয়েছে, যার মূল ক্যামেরা ১৩ মেগাপিক্সেল আর সেলফি ক্যামেরা ৮
মেগাপিক্সেল।
দিনের আলোতে পেছনের
ক্যামেরাতে সুন্দর ছবি তোলা যাবে। বিশেষ করে ছবির কনট্রাস্ট আর হোয়াইট ব্যালেন্স
খুবই সুন্দর। ডিটেইলের পরিমাণও কাজ চালানোর মত, নয়েজ তেমন নেই।
বিপত্তির শুরু ডাইনামিক রেঞ্জের ক্ষেত্রে। যেসকল দৃশ্যে আলো-ছায়ার খেলা বেশি, সেখানে ছায়া ও অতিরিক্ত আলোর জায়গা দুটি ক্ষেত্রেই ডিটেইলের পরিমাণ খুবই কম। এইচডিআর মোডে ছবি তুললে কালার স্যাচুরেশন বেড়ে যায় অতিরিক্ত।
পোর্ট্রেইট মোড বেশ ভাল
কাজ করে। বিষয়বস্তুর পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ড বোকেহ দেখতে খুব অস্বাভাবিক মনে হবে না।
বিষয়বস্তু আর
ব্যাকগ্রাউন্ডের মধ্যে পার্থক্য করার সফটওয়্যারও ভালভাবে কাজ করে, ফলে পোর্ট্রেইট
মোড ব্যবহারে সমস্যা হবে কম।
স্বল্প আলোতে ক্যামেরাটি ডিটেইল আর নয়েজের মধ্যে ভারসাম্য ধরে রাখতে অক্ষম। ডাইনামিক রেঞ্জের অভাব খুব ভালভাবে ফুটে উঠবে।
একই সমস্যা ভিডিওর
ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, সঙ্গে যোগ হয়েছে স্ট্যাবিলাইজেশনের অভাব। ফলে ভিডিও করার
ক্ষেত্রে একমাত্র উজ্জ্বল আলোর দৃশ্যে স্ট্যান্ড ব্যবহার করে ধারণ করা ছাড়া উপায়
নেই।
সেলফি ক্যামেরাও একই
সমস্যা, তাই নতুন করে কিছু তুলে ধরার নেই।
সাউন্ড
স্পিকার বা হেডফোন,
দুটি ক্ষেত্রেই ফোনটি উচ্চ ভলিউমে সাউন্ড দিতে সক্ষম। হেডফোনে সাউন্ডের মান
সন্তোষজনক, গান শুনে ভালো লাগবে। স্পিকারে সাউন্ড জোরে শোনা গেলেও খুব পরিষ্কার
নয়।
ব্যাটারি
লাইফ
মাঝারি ক্ষমতার
প্রসেসরের সঙ্গে ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি খুবই ভালো ব্যাকাপ দেবে নতুন নয়। টানা ৩ দিন
পর্যন্ত মাঝারি ব্যবহারে ব্যাকাপ পাওয়া যাবে। টানা ব্যবহারে স্ক্রিন চালু থাকবে ৮
থেকে ১০ ঘণ্টা, বিশেষ করে ভিডিও দেখা, গান শোনা আর ব্রাউজিং করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ
থাকলে। গেইম খেললে অবশ্য ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার বেশি টানা খেলা যাবে না।
ফাস্ট চার্জিং না থাকা
ফোনের মূল সমস্যার একটি। একবার ব্যাটারি ফুরিয়ে গেলে অন্তত ২ থেকে ৩ ঘণ্টা চার্জ
করতে হবে ফোনটি।
পরিশেষ
ফিঙ্গারপ্রিন্টের
পাশাপাশি ফেইস আনলক থাকলেও, জেনফোন ম্যাক্স প্রো এম১এ তা শুধুমাত্র উজ্জ্বল আলোতেই
ভালো কাজ করে। অতএব ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যাবহার করাই শ্রেয়। অ্যান্ড্রয়েডের
ওপর আসুস এবার স্কিন চাপায়নি ঠিকই, তবে ফোনটি দ্রুত আপডেট পাবে কি না তা নিয়ে কিছু
জানা যায়নি।
এক
নজরে ভালো
·
দিনের আলোয় ক্যামেরা
·
হেডফোনে সাউন্ড
·
ব্যাটারি লাইফ
·
ডিসপ্লে
·
অপ্রয়োজনীয় সিস্টেম
অ্যাপ নেই
·
স্বল্প আলোতে ক্যামেরা
·
ভিডিওতে নেই
স্ট্যাবিলাইজেশন
·
ফাস্ট চার্জিং নেই
মূল্য
অনানুষ্ঠানিকভাবে ফোনটির মূল্য ১৫ থেকে ১৬ হাজার
টাকা
Nice
ReplyDelete